বিনোদনের নানা মাধ্যম থাকলেও চলচ্চিত্রকে সর্বজনীন মাধ্যম হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। ইন্টারনেটের এই যুগে দেশ-কালের গ-িও যেন ভেঙে দিয়েছে চলচ্চিত্র। তাই তো বিশ্বের কোন ছবি বক্স অফিসে হিট করছে, কোনটি ফ্লপ করছে- এটি নিত্যদিনের আলোচনা। সম্প্রতি দর্শকদের রেটিংয়ের ওপর ভিত্তি করে আইএমডিবি সর্বকালের সবচেয়ে দর্শকপ্রিয় ছবির তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখান থেকেই শীর্ষ সাত ছবির কথা তুলে ধরা হলো আমাদের সময়ের পাঠকদের জন্য…
দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন
অন্ডি ডুফরে¯œ নামে একজন ব্যাংকার, যিনি তার প্রেমিকা ও স্ত্রীকে খুনের কারণে শশাঙ্ক স্টেট প্রিজনে সাজা ভোগ করছেন। কারাগারে এলিস বয়েড ‘রেড’ রিডিংয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় তার। ড্রামা জনরাঁর এই ছবির পুরোটাই সেই কারাগারের গল্প, যার শেষভাগে রয়েছে বেশ বড়সড় এক চমক। বক্স অফিস ফ্লপ করলেও ‘দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন’ বড় বড় ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। নিকি মারভিনের প্রযোজনায় এটি পরিচালনা করেন ফ্র্যাংক ড্যারাবন্ট। ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচের ছবিটি ‘আইএমডিবি’তে প্রায় ২২ লাখ দর্শকের ভোটিংয়ে ৯ দশমিক ৩ রেটিং নিয়ে রয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
দ্য গডফাদার
মারিও পুজোর একই নামের বেস্ট-সেলিং উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন কোপলা ও পুজো। ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার পরিচালনা ও আলবার্ট এস রুডির প্রযোজনায় এটি বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা ছবি হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে গ্যাংস্টার ঘরানার ছবিগুলোর মধ্যে এটিকে অনন্য মনে করা হয়। ১৫ লাখেরও বেশি দর্শকের ভোটে ‘আইএমডিবি’তে ৯ দশমিক ২ রেটিং নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এ ছবিটি।
দ্য গডফাদার ২
১৯৭২ সালে ‘দ্য গডফাদার’-এর আকাশচুম্বী সাফল্যের পর একই পরিচালকের পরিচালনায় পরের বছর মুক্তি পায় সিক্যুয়াল ‘দ্য গডফাদার ২’। প্রথম পর্বের মতো এটিও দর্শকের মাঝে বেশ সাড়া ফেলে, তবে সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। ছবিটির চিত্রগ্রহণের প্রশংসায় যেমন পঞ্চমুখ ছিলেন কেউ কেউ, তেমনি অসরলরৈখিক বর্ণনাশৈলীতে কিছু বিশৃঙ্খলা খুঁজে পান বলে জানান অনেকে। তবে সব সমালোচনা ছাপিয়ে গ্যাংস্টার ঘরানার আরেকটি সফল উদাহরণ হিসেবে ছবিটিকে স্বীকৃতি দিয়েছেন সবাই। ১০ লাখেরও বেশি দর্শকের ভোটে ৯ দশমিক শূন্য রেটিং নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এটি।
দ্য ডার্ক নাইট
সুপারহিরো চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ‘দ্য ডার্ক নাইট’ এক নতুন ধারার সূচনা করে বলেই মনে করা হয়। ডিসি কমিকসের জনপ্রিয় সুপারহিরো চরিত্র ব্যাটম্যানকে নিয়ে নির্মিত এ ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যৌথ প্রযোজনায় এটি পরিচালনা করেন ক্রিস্টোফার নোলান। বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটিরও বেশি মার্কিন ডলার আয় করা এই ছবিকে অনেক সমালোচকই সর্বকালের অন্যতম সেরা সুপারহিরো চলচ্চিত্র আখ্যা দিয়েছেন। ২১ লাখেরও বেশি দর্শকের ভোটে ৯ দশমিক শূন্য রেটিং নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে এটি।
টুয়েলভ অ্যাংরি মেন
একটি আদালত কক্ষ, তাতে বসে আছেন ১২ জন জুরি। পিতাকে খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত এক তরুণের বিচারই করতে বসেছেন তারা। শুরুতেই ১১ বিচারক ধারণা করেন, ছেলেটি নির্দোষ। বাকি একজন কেবল মনে করেন, ছেলেটি নির্দোষ হলেও হতে পারে। শুরু হয় সবার আলোচনা-পর্যালোচনা। সিডনি লুমেট পরিচালিত এ ছবি সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক ও অন্য মাধ্যমের গল্পের সেরা চিত্রনাট্য বিভাগে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পুরস্কার জিততে না পারলেও সবার দৃষ্টিতেই সর্বকালের সেরা কোর্টরুম ড্রামার মধ্যে স্থান করে নেয় ছবিটি। প্রায় সাড়ে ছয় লাখের বেশি দর্শকের ভোটে ৮ দশমিক ৯ রেটিং নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে এটি।
শিন্ডলার্স আর্ক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার এক অস্ট্রিয়ান-হাঙ্গেরিয়ান শিল্পপতি অস্কার শিন্ডলারের জীবনী নিয়ে বুকারজয়ী অস্ট্রেলিয়ান লেখক থমাস কেনিয়েল লিখেছিলেন হৃদয়স্পর্শী উপন্যাস ‘শিন্ডলার্স আর্ক’। এটির গল্প থেকেই একই নামে এ ছবিটি নির্মাণ করেন বিশ্বখ্যাত পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটির অন্যতম প্রযোজকও ছিলেন তিনি। যুদ্ধ নিয়ে সেরা চলচ্চিত্রগুলোর একটি মনে করা হয় এটিকে। ১১ লাখেরও বেশি দর্শকের ভোটে ৮ দশমিক ৯ রেটিং নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে এটি।
লর্ড অব দ্য রিংস : দ্য রিটার্ন অব দ্য কিং
ইংলিশ লেখক জেআর টলকিনের বেস্টসেলার সিরিজ ‘লর্ড অব দ্য রিংস’কে ছবিতে রূপান্তর করেন পিটার জ্যাকসন। বইয়ের মতো ছবিটিও তৈরি হয় তিন পর্বে। সিরিজের শেষ পর্বটি ছিল ‘রিটার্ন অব দ্য কিং’, মুক্তি পায় ২০০৩ সালে। ফ্যান্টাসি ঘরানার এক মহাকাব্যিক রচনা মনে করা হয় ‘লর্ড অব দ্য রিংস’কে, ছবিতেও যার ছিল সফল চিত্রায়ণ। যে কারণে ফ্যান্টাসি ঘরানার অন্যতম সেরা চলচ্চিত্রও মনে করা হয় এই সিরিজকে, বিশেষ করে এ পর্বটিকে। ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত সর্বকালের সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমার তালিকাতেও ২১তম স্থানে ছিল এটি। ১৫ লাখেরও বেশি দর্শকের ভোটে ৮ দশমিক ৯ রেটিং নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে এটি।
Leave a Reply